• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ নওয়াপাড়া পৌর মেয়রের সুসজ্জিত নতুন অফিস উদ্বোধন অন-অনুমোদিত ও ভেজাল ইউনানী, আয়ুর্বেদিক কোম্পানির প্রাণঘাতী ঔষধে বাজার সয়লাব টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ম্যান সিটির ইতিহাস দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু বাফুফের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ভারত–পাকিস্তান ফাইনাল দেখছেন কাইফ স্টার স্পোর্টসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন রোহিত শর্মা অবশেষে ২০০ টপকে জিতল হায়দরাবাদ ফাঁস হওয়া ছবি নিয়ে যা বললেন পরিচালক নির্বাচন যে খুব সহজ কাজ নয়, সেটি টের পাচ্ছেন কঙ্গনা! প্রচণ্ড গরমেও আমরা মাথা ঠান্ডা রাখি… ২৫ দিন পর বাড়িতে ফিরলেন, কোথায় ছিলেন এই অভিনেতা? শূন্য থেকে বলিউডের শীর্ষে ভোটে জিতলে অভিনয়কে বিদায় জানাবেন কঙ্গনা শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেয়ে যা বললেন জায়েদ খান অভিনেত্রীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে স্বামীর আত্মহত্যা

টাকায় নয়, সৎকর্মের দামে ইফতার

বিশেষ প্রতিনিধি সামিনা বেগম। বয়স আনুমানিক ৬০। থাকেন কারওয়ান বাজার রেলগেট এলাকায়। স্বামী নেই। তিন ছেলেমেয়ের দু’জন মারা গেছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রংপুরে। তার পর ঢাকায় চলে আসেন কাজের খোঁজে। শুরুতে বাসাবাড়িতে কাজ করলেও বয়স হওয়ায় এখন কাজ পান না। বেশির ভাগ সময়ই থাকেন অসুস্থ। চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্যও নেই। তিনবেলা খাবার জোটে না। প্রতিবেশীর কাছে শুনেছিলেন ‘ভালো কাজের হোটেল’ নাকি খাবার দেয়। তার পর থেকে মাঝেমধ্যে এখানে এসে খান। রমজানে এখানেই ইফতার করছেন। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে কথা হয় সামিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব জিনিসের যা দাম, তাতে ওষুধ কিনে খাওয়ার টাকা বাঁচানো যায় না। শরীর যেদিন বেশি খারাপ থাকে, সেদিন এ হোটেলে আসতে পারি না। না খেয়ে থাকতে হয়। ‘ভালো কাজের হোটেলে’ খান সত্তরোর্ধ্ব রিকশাচালক আব্দুল হামিদ। দুই ছেলে থাকলেও তারা ভরণপোষণের দায়িত্ব নেননি। স্ত্রী মারা গেছেন অনেক দিন আগে। ঢাকায় কড়াইল বস্তিতে থাকেন। রিকশায় যাত্রী টানতে টানতে এসেছেন তেজগাঁও সাতরাস্তায়। সেই সুযোগে ইফতার করলেন ‘ভালো কাজের হোটেলে’। সেহরিতে দুটি রুটি খেয়েছিলেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ রিকশাচালক। তিনি বলেন, এ বয়সে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। কিন্তু কী করব, খেয়ে বাঁচতে হবে তো! এখানে খুব ভালো খাবার দেওয়া হয়। দেড়শ টাকা দিয়েও এ খাবার কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।সামিনা বেগম কিংবা আব্দুল হামিদের মতো হতদরিদ্রদের অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করছে এ ‘ভালো কাজের হোটেল’। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ুথ ফর বাংলাদেশের এ উদ্যোগে অন্তত ১ হাজার ৮০০ জন সারা বছর এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। রমজানে দরিদ্র মানুষের মুখে ইফতার তুলে দেন। 

সূত্র জানায়, রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, সাতরাস্তা, বনানী কড়াইল বস্তি, মিরপুর, কালশী, মোহাম্মদপুর, রবীন্দ্র সরোবর, খিলগাঁও, বাসাবো এলাকায় এবং চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনে দৈনিক ২ হাজার ২০০ জনকে ইফতার করানো হচ্ছে। ইফতারে তাদের পানি, শরবত এবং চিকেন বিরিয়ানি কিংবা চিকেন খিচুড়ি দেওয়া হয়। রমজান মাসজুড়ে চলে এ কার্যক্রম।সরেজমিন রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ইফতারের অন্তত ৪৫ মিনিট আগে থেকেই রাস্তার পাশে লাইন ধরে শতাধিক মানুষ খাবারের আশায় বসে আছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের দিনের ভালো কাজের কথা সবার কাছে জিজ্ঞাসা করছেন, আর খাতায় টুকে নিচ্ছেন। সেখানে সংগঠনের চার স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে আরও কয়েক তরুণকে কাজ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ইফতারের ১০ মিনিট আগে স্থানীয় একজন ইমাম এসে মোনাজাত করেন। স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কাজ করছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জিসান আহমেদ জুয়েল। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে তাঁর অনেক ইচ্ছা ছিল হতদরিদ্র মানুষের সেবা করা। কিন্তু তেমন সামর্থ্য এখনও তাঁর নেই। তিনি এ সংগঠনের সদস্যও নন। তবুও ভালো কাজের হোটেলের সঙ্গে থেকে মানুষের সেবা করতে পারছেন– এটাই তাঁর আত্মতৃপ্তি। রমজানজুড়েই তিনি মানুষের জন্য কাজ করবেন। সংগঠনের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছে– জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, তাঁর ক্যাম্পাসের একজন ম্যামের মাধ্যমে তিনি এর কথা জানতে পারেন। পরে অনলাইনে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে কাজ করেন। স্থানীয় বাইতুল আমান জামে মসজিদের ইমাম আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার প্রথম এখানে মানুষের সঙ্গে ইফতারের আগে দোয়া করছেন। ভালো কাজের বিনিময়ে এখানে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। অনেক ভালো উদ্যোগ। তাই তিনিও শরিক হয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, ভালো কাজের হোটেল সারা বছরই হতদরিদ্র মানুষকে ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার বিতরণ করে। রমজানের সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র রোজাদারদের ইফতার করানো হয়। রাজধানী ঢাকার ১০টি ও চট্টগ্রামের একটি স্থানে খাবার বিতরণ করা হয়। সাতরাস্তায় দায়িত্বরত হোটেলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক জাকির হোসাইন বলেন, তারা সারা বছর এই কার্যক্রম চালান। কীভাবে বোঝেন যে কেউ ভালো কাজ করেছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝতে পারি কে সত্য বলছে, আর কে মিথ্যা বলছে। মিথ্যা বললে খাবার কেড়ে নেই না। তাকে কাউন্সেলিং করাই।ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদের ‘সবুজ ছায়া’ নামের একটি নাটক দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভালো কাজের হোটেল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আরিফুর রহমান। ওই নাটকে অভিনেতা জাহিদ হাসান প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতেন। সেই ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি এবং তাঁর কিছু বন্ধু ২০০৯ সালে ‘ভালো কাজের হোটেল’ চালু করেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছরের ১৮ নভেম্বর সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটেগরিতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে সংগঠনটি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.